বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা : ক্রসফায়ারে ময়মনসিংহের পুরোহিতপাড়ার রাজন হত্যার ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার সাবেক ওসি আশিকুর রহমানসহ ১৭ জনের নামে আদালতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকালে তার বাবা হারুন অর রশিদ (৫৪) বাদী হয়ে ময়মনসিংহ সদর ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলার জন্য অভিযোগ দাখিল করেন।অভিযোগ দাখিলের পর আমলে নিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওশন জামিল ঘটনা তদন্তপূর্বক কোতোয়ালি মডেল থানা ওসিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এসআই আকরাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, এএসআই জিন্নাত হাসান মানিক, এএসআই জাকির হোসেন, এএসআই জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, কনস্টেবল গোলজার, কনস্টেবল সোহরাব আলী, কনস্টেবল সাইফুল, কনস্টেবল সেলিম, কনস্টেবল রাশেদুল, কনস্টেবল সানোয়ার ও কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম।মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাছিনুর রহমান জানান, বাদী হারুন অর রশিদ মামলা করতে রবিবার আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ঘটনা তদন্তপূর্বক কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২২ মে মঙ্গলবার রাত ১টার সময় ডিবির সাবেক ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পুরোহিতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে বাদীর ছেলে রাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে বাদী তার ছেলেকে দেখার জন্য ডিবি কার্যালয়ে যান। কিন্তু দুই দিনেও তাকে ছাড়েনি। এরপর ২৪ মে সকালে বাদী আবারও ছেলেকে ছাড়াতে ডিবি কার্যালয়ে গেলে ওসি আশিকুর রহমান ১০ লাখ টাকা রাতের মধ্যে দিতে হবে- এমনটা দাবি করেন। বাদী টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে রাত পৌনে ২টার সময় পুরোহিতপাড়া রেলওয়ে ভাঙা ওয়াল সংলগ্ন পুকুরপাড় দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় রেনু বেগমের বাড়ির পাশে রাজনকে নিয়ে গিয়ে ওসি আশিকুর রহমানের নির্দেশে সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে বুকে ও পেটের নিচে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এরপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে লাশ তুলে দেয়। মামলার বাদী হারুন অর রশিদ দাবি করেন, ১০ লাখ টাকা দিতে না পারায় ওসি আশিকুর রহমানসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা আমার ছেলেকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছি।
উল্লেখ্য যে, মৃত রাজন একাধিক মাদক মামলার আসামী ছিলেন । তার মৃত্যুর পর এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছিল এলাকাবাসী। এ মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন ফৌজদারি মামলা রুজু করে ছিল পুলিশ। পুলিশ সেই মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ রিপোর্ট কোর্টে প্রেরন করলে আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহন করেন।এছাড়াও গুলির ঘটনার তদন্তে ময়মনসিংহের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এ নেওয়াজীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় তদন্ত করানো হয়েছিলো। সেখানে পুলিশ যে উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে গুলি করেছিল তা সঠিক ছিলো মর্মে উল্লেখ করা হয়েছিল। একই ঘটনায় নির্বাহী তদন্তে ও গুলির যৌক্তিকতা সঠিক মর্মে প্রতীয়মান হয়।